কারেন্ট বিল বের করার নিয়ম - অজানা কিছু তথ্য
কারেন্ট বিল বের করার নিয়ম হল আমাদের আজকের মূল বিষয়। পোস্টের টাইটেল পড়ে হইত বুঝে গেছেন আজকে আমরা কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি । আমরা আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কারেন্ট বিল কীভাবে দেখতে হয় , কীভাবে বের করতে হয় এই সকল বিষয় বিস্তার ভাবে আলোচনা করবো।
এছাড়াও সাথে থাকবে যেভাবে কারেন্ট বিল কমানো যায় আবার গাণিতিক উপায়ে বিলের সঠিক সত্যতা নিজে নিজে যাছাই করতে পারবেন। আর্টিকেলের ভিতর থাকবে আরও কিছু অজানা তথ্য। আর্টিকেলের মূল কারন হল নিজে কীভাবে কারেন্ট বিল দেখবো এবং যেভাবে বিল বের করবো। সুতরাং আর দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক কারেন্ট বিল বের করার সঠিক নিয়ম।
সূচিপত্রঃ কারেন্ট বিল বের করার নিয়ম ও পদ্ধতিসমূহ
- কারেন্ট বিল বের করার নিয়ম
- কারেন্ট বিল যেভাবে হিসাব করা হয়
- বিদ্যুৎ মিটার কীভাবে কাজ করে
- মিটার রিডিং নেওয়ার নিয়ম ও উদাহরণ
- কনজিউমার নাম্বার দিয়ে কারেন্ট বিল পরিশোধ
- কোন কোন যন্ত্র কত ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করে
- বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার বাস্তবসম্মত উপায়
- বিল চেক ও পরিশোধের ডিজিটাল সুবিধা
- বিল সংক্রান্ত ভুল-ত্রুটি ও তার সমাধান
- প্রিপেইড মিটার বনাম পোস্টপেইড মিটার
- সচেতনতা ও নিয়মিত যাচাই কেন জরুরি
- পরিশেষে
কারেন্ট বিল বের করার নিয়ম
কারেন্ট বিল বের করার মূল বিষয় হল আমরা অনেকেই মাসের শেষে বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়ে অবাক হয়ে যাই—“এত ইউনিট কিভাবে
খরচ হলো?” অথচ একটু সচেতন হলেই আপনি নিজের বাড়ির বিদ্যুৎ বিল নিজেই খুব সহজে
হিসাব করতে পারেন। প্রথমেই যা দরকার তা হলো, আপনার মিটারের রিডিং দেখা। প্রতি
মিটারেই একটি সংখ্যা প্রদর্শিত হয়, যেটি কিলোওয়াট আওয়ার বা kWh দিয়ে প্রকাশ
করা হয়। ধরে নিন, গত মাসে আপনার মিটারে ছিল ১২৩৪ এবং এবার আছে ১৩৫০। তাহলে
ব্যবহৃত ইউনিট হলো ১৩৫০ - ১২৩৪ = ১১৬ ইউনিট।
এখন আসা যাক মূল অংশে—এই ইউনিট অনুযায়ী কিভাবে টাকায় রূপান্তর করবেন।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিল সাধারণত স্ল্যাব রেটে হয়, অর্থাৎ ইউনিটের পরিমাণ যত
বাড়বে, প্রতি ইউনিটের খরচও একটু একটু করে বাড়ে। প্রথম ৫০ ইউনিট সাধারণত
সবচেয়ে কম রেটে, তার পরের ২৫ ইউনিট একটু বেশি, এভাবে ধাপে ধাপে বাড়ে। এই
হিসাবটা সরকার নির্ধারিত রেট অনুসারে হয়, যা আপনি বিদ্যুৎ বোর্ডের ওয়েবসাইট
বা নিকটস্থ অফিস থেকে জানতে পারবেন।
এই ধাপগুলো ধরেই আপনি নিজে নিজেই হাতে কাগজ-কলম নিয়ে পুরো বিল বের করতে
পারেন। ধরুন, প্রথম ৫০ ইউনিট × ৩.৭৫ টাকা, পরবর্তী ২৫ ইউনিট × ৪.১৯ টাকা, এর
পরের অংশ × ৫.৭২ টাকা—এইভাবে গুন করে হিসাবটা করুন। শেষে ভ্যাট, সার্ভিস
চার্জ, মিটার ভাড়া এসব যোগ করতে হবে। বেশিরভাগ মানুষ এই অতিরিক্ত চার্জগুলো
খেয়াল করেন না, ফলে আসল খরচ থেকে বেশি মনে হয়।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, আপনি যদি প্রতি মাসে একবার করে নিজে রিডিং নিয়ে হিসাব
করেন, তাহলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার বিদ্যুৎ খরচ কোথায় যাচ্ছে। এতে
শুধু বিল নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, বরং আপনি আরও সচেতন হবেন আপনার দৈনন্দিন
বিদ্যুৎ ব্যবহারে।
কারেন্ট বিল যেভাবে হিসাব করা হয়
মাস শেষে যখন বিদ্যুৎ বিল আসে, তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে—এই বিলটা কিভাবে
হিসাব করা হলো? আসলে এটি বোঝা কঠিন কিছু নয়। আপনি একটু মনোযোগ দিলে সহজেই
বুঝতে পারবেন কীভাবে আপনার বাসার বিদ্যুৎ খরচ টাকায় রূপান্তরিত হয়। প্রতিটি
বাসায় একটি বিদ্যুৎ মিটার থাকে, যেটি আপনার মাসিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ
পরিমাপ করে। মিটারের ডিসপ্লেতে একটি সংখ্যা থাকে, যেটি কিলোওয়াট আওয়ারে
(kWh) প্রকাশিত হয়।
আপনার ব্যবহার করা ইউনিট বের করতে হলে আপনাকে শুধু বর্তমান রিডিং থেকে আগের
মাসের রিডিং বিয়োগ করতে হবে। ধরুন, গত মাসে ছিল ১০০০, আর এবার দেখলেন ১১২৫।
তাহলে আপনি এই মাসে ১২৫ ইউনিট ব্যবহার করেছেন।
এরপর আসে মূল অংশ—এই ইউনিট অনুযায়ী টাকার হিসাব। বাংলাদেশে আবাসিক বিদ্যুৎ
বিল একটি স্ল্যাব পদ্ধতিতে নির্ধারিত হয়। মানে, প্রথম কিছু ইউনিট কম দামে,
আর যত বেশি ব্যবহার করবেন, প্রতি ইউনিটের দাম তত বাড়বে। এই ধাপে ধাপে ইউনিট
গুন করে হিসাব করা হয়, যেমন প্রথম ৫০ ইউনিট যদি হয় ৩.৭৫ টাকা, পরবর্তী ২৫
ইউনিট ৪.১৯ টাকা করে, এভাবে গুনে যোগ করতে হয়।
সবশেষে যোগ হয় ভ্যাট, সার্ভিস চার্জ ও মিটার ভাড়া। এসব মিলিয়ে তৈরি হয় আপনার
মাসিক কারেন্ট বিল। আপনি চাইলে ক্যালকুলেটর হাতে নিয়ে একেবারে নিজেই পুরোটা
হিসাব করে দেখতে পারেন, যাতে কোনো সন্দেহ না থাকে। অভ্যাসে পরিণত হলে বিষয়টা
একদম সহজ মনে হবে।
আরও পড়ুনঃ মিটার পরিবর্তন করার নিয়ম
বিদ্যুৎ মিটার কীভাবে কাজ করে
আমরা প্রতিদিন বাড়িতে ফ্যান, লাইট, ফ্রিজ, টিভি চালাই। এই সব যন্ত্র চলতে বিদ্যুৎ লাগে, আর সেই বিদ্যুৎ কত ইউনিট খরচ হচ্ছে, সেটা মাপার যন্ত্রই হল বিদ্যুৎ মিটার। সাধারণভাবে, বিদ্যুৎ মিটার একটা ছোট বাক্সের মতো দেখতে, যেটা বাড়ির বাইরের দেওয়ালে বা মেইন লাইন-এর সাথে লাগানো থাকে। এই মিটারের ভিতর দিয়ে সব বিদ্যুৎ আমাদের ঘরে আসে।
বিদ্যুৎ মিটার আসলে কী করে? এটা যা করে তা হল, প্রতি সেকেন্ডে ঘরে কতটা বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে, সেটা মেপে রাখে। সাধারণত আমরা ‘ইউনিট’ শব্দটা ব্যবহার করি, আসলে এটা কিলোওয়াট-ঘণ্টা (kWh)। ধরুন আপনার ঘরে একটা ১০০ ওয়াটের বাল্ব আছে, আর সেটা যদি ১০ ঘণ্টা ধরে জ্বলে, তাহলে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হবে। এই হিসাবটাই মিটার করে দেয়।
পুরনো দিনে এনালগ মিটার ছিল যেখানে একটা ঘূর্ণায়মান চাকতি ঘুরত, আর সেটার গতি দেখে বোঝা যেত কত ইউনিট বিদ্যুৎ গেছে। এখন ডিজিটাল মিটার চলে এসেছে, যেখানে ডিসপ্লেতে স্পষ্টভাবে দেখা যায় কত ইউনিট খরচ হয়েছে।
এই মিটার আবার প্রতি মাসে নতুন করে হিসাব করে দেয়—এক মাসে আপনি কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন, সেটা ধরেই বিদ্যুৎ বিল আসে। ধরুন এক মাসে আপনার মিটার দেখাচ্ছে ১৫০ ইউনিট, আর প্রতি ইউনিটের দাম যদি ৬ টাকা হয়, তাহলে বিল হবে ১৫০×৬ = ৯০০ টাকা (অতিরিক্ত ট্যাক্স বাদ দিয়ে)।
সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, এই মিটার ঠকানো যায় না। কারণ নতুন স্মার্ট মিটারগুলো রিমোটলি ডেটা পাঠায় বিদ্যুৎ অফিসে। তাই আপনি যদি একদিনও বেশি ফ্রিজ চালান, সেটাও রেকর্ড হয়ে যায়।
অতএব, বিদ্যুৎ মিটার একেবারেই নীরব কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। আপনি বুঝে উঠার আগেই, ওটা আপনার ঘরে প্রতিটি বাতি, পাখা, ফ্রিজের হিসাব টুকে রাখছে।
মিটার রিডিং নেওয়ার নিয়ম ও উদাহরণ
বিদ্যুৎ মিটার রিডিং নেওয়া মোটেও কঠিন কাজ নয়। একটু মনোযোগ দিলেই আপনি
নিজেই বাসার মিটার থেকে রিডিং নিয়ে নিজের কারেন্ট বিল আনুমানিকভাবে হিসাব
করে নিতে পারবেন। প্রথমে যা করতে হবে, সেটা হলো মিটারের ডিসপ্লেটা ভালো করে
পর্যবেক্ষণ করা। আপনি যদি ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করেন, তাহলে সেখানে একটি
সংখ্যা চোখে পড়বে—এটি সাধারণত পাঁচ বা ছয় অঙ্কের হয় এবং শেষের দুটো সংখ্যা
দশমিকের পরে থাকে। সেই সংখ্যাই হলো আপনার বিদ্যুৎ ইউনিট রিডিং।
উদাহরণ হিসেবে ধরুন, আপনি মিটারে দেখলেন: 012356.78। এখানে দশমিকের আগের
অংশটাই মূল রিডিং—অর্থাৎ, ১২,৩৫৬ ইউনিট। আপনি যদি আগের মাসে রিডিং নিয়েছিলেন
এবং তা ছিল ১২২৫০, তাহলে চলতি মাসে আপনার বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে ১২৩৫৬ -
১২২৫০ = ১০৬ ইউনিট।
আর যদি এনালগ মিটার হয়, তবে তাতে ঘূর্ণায়মান চাকায় ঘূর্ণনের পরিমাণ অনুযায়ী
এক ধরনের ডায়াল থাকে, যেগুলো পর্যায়ক্রমে সংখ্যা দেখায়। সেগুলো সাধারণত বাঁ
থেকে ডানে ক্রমান্বয়ে পড়তে হয়। তবে কিছু এনালগ মিটারে একেকটি ডায়াল একে
অপরের বিপরীত দিকে ঘোরে, তাই পড়ার সময় সাবধান থাকতে হয়।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি মাসের নির্দিষ্ট দিনে রিডিং নেন এবং একটি খাতায় লিখে
রাখেন। এতে আপনি প্রতিমাসের ব্যবহারে তারতম্য সহজেই বুঝতে পারবেন। এই অভ্যাসে
শুধু নিজের খরচ নিয়ন্ত্রণে থাকে না, ভুল বিল এলে সেটিও চটজলদি ধরতে পারবেন।
কনজিউমার নাম্বার দিয়ে কারেন্ট বিল পরিশোধ
আগে যেভাবে বিদ্যুৎ বিল দিতে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে লাইন ধরতে হত, এখন সেই ঝামেলা আর নেই। এখন মোবাইল বা কম্পিউটার থাকলেই ঘরে বসে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া যায়। শুধু কনজিউমার নাম্বারটা জানা থাকতে হবে। এই নাম্বারটা বিদ্যুৎ অফিস আপনাকে দিয়েছে, আর এটা প্রতিটা মিটারের জন্য আলাদা হয়।
কনজিউমার নাম্বার সাধারণত বিদ্যুৎ বিলের কাগজে লেখা থাকে, আর সেটা ১০-১২ সংখ্যার একটা নম্বর হয়। কেউ কেউ এটাকে আইডি নাম্বারও বলে। এখন যদি আপনি বিল দিতে চান, তাহলে প্রথমে একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম দরকার—যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট বা বিদ্যুৎ অফিসের নিজস্ব ওয়েবসাইট।
যেমন ধরুন, আপনি বিকাশ অ্যাপ খুললেন। সেখানে “পে বিল” অপশনটা আছে। সেখানে গিয়ে “ইলেকট্রিসিটি” বা “বিদ্যুৎ” সিলেক্ট করলে বিভিন্ন বিদ্যুৎ কোম্পানির নাম আসবে—যেমন DPDC, DESCO, বা NESCO। আপনি যেটার আওতায় পড়েন, সেটা বেছে নিলেই হবে। তারপর কনজিউমার নাম্বারটা বসাতে হবে ঠিকঠাক। একটা ভুল নাম্বার দিলে অন্য কারো বিল দিয়ে দিতে পারেন, তাই একটু দেখে-শুনে দেওয়া ভালো।
নাম্বার বসানোর পর অটোমেটিক আপনার নাম, ঠিকানা, এবং কত টাকা বিল বাকি সেটা দেখাবে। সব ঠিক থাকলে “নেক্সট” চাপলেই বিল চলে যাবে, সাথে সাথে কনফার্মেশন মেসেজও আসবে মোবাইলে।
এইভাবে একদম সহজে আপনি মাসে মাসে বিদ্যুৎ বিল দিতে পারবেন। না লাইনে দাঁড়ানো, না অফিসে গিয়ে ঝামেলা করা—সব মোবাইলেই হয়ে যাচ্ছে।
আর একটা কথা, কেউ কেউ এখন অটো-পেমেন্ট সেট করে রাখে, মানে মাসে একবার নির্দিষ্ট দিনে অ্যাপ থেকে বিল কেটে নেয়। এটা করলে ভুলে যাওয়ার ভয় থাকে না।
সব মিলিয়ে, এখনকার দিনে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া যেন অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। শুধু কনজিউমার নাম্বারটা হাতে রাখলেই হল, বাকিটা মোবাইল নিজেই করে দেবে।
কোন কোন যন্ত্র কত ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করে
ঘরে বসে আমরা অনেক যন্ত্র ব্যবহার করি – যেমন ফ্যান, লাইট, টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি। কিন্তু এদের প্রতিটা চালালে বিদ্যুৎ খরচ হয়, আর সেই খরচটাই মাস শেষে বিল হয়ে আসে। অনেকে ভাবেন, “আরে এইটুকু জিনিসে এত বিল কেন আসে?” কিন্তু যদি একটু হিসাব করে দেখা যায়, তাহলে বুঝতে পারবেন কোন কোন যন্ত্রে বেশি ইউনিট যায়, আর কোনটা তুলনামূলকভাবে কম খরচ করে।
সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচ করে সাধারণত এলইডি লাইট বা ইনার্জি সেভার। একটা ৯ ওয়াটের এলইডি বাল্ব যদি প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা করে জ্বলে, তাহলে মাসে ইউনিট খরচ হয় (৯×৫×৩০) ÷ ১০০০ = প্রায় ১.৩৫ ইউনিট। এই জন্যেই এখন সবাই এলইডি ব্যবহার করছে।
এবার ফ্যানের কথায় আসা যাক। একটা সাধারন সিলিং ফ্যান ৭৫ থেকে ৯০ ওয়াট পর্যন্ত হতে পারে। ধরা যাক, আপনি প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা ফ্যান চালান। তাহলে মাসে ইউনিট খরচ (৮০×১০×৩০)/১০০০ = ২৪ ইউনিট। ফ্যান সংখ্যায় বেশি হলে হিসাব বেড়ে যাবে।
ফ্রিজটা একটু আলাদা। এটা সারাক্ষণই চলে। মাঝেমাঝে কম্প্রেসর বন্ধ থাকে বটে, কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয় না। একেকটা ফ্রিজের পাওয়ার রেটিং অনুযায়ী ইউনিট খরচ আলাদা হয়। ধরুন একটা ২০০ লিটার ফ্রিজ যদি দিনে ১.২ ইউনিট খরচ করে, তাহলে মাসে সেটা ৩৬ ইউনিটের মতো হয়। তবে পুরনো ফ্রিজ হলে সেটার খরচ আরও বেশি হয়।
টিভি সাধারণত ৭০-১০০ ওয়াটের মধ্যে হয়। যদি প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা দেখেন, তাহলে মাসে (৮০×৫×৩০)/১০০০ = ১২ ইউনিট। তবে স্মার্ট টিভি বা বড় ডিসপ্লের হলে এই হিসাব বাড়ে।
এসি হল সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচ করা যন্ত্র। একটা ১.৫ টন এসি ঘণ্টায় গড়ে ১.৫ ইউনিট পর্যন্ত খরচ করতে পারে। যদি প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা চালান, তাহলে (১.৫×৫×৩০) = ২২৫ ইউনিট শুধু এসির জন্যই! এই কারণেই যাদের এসি থাকে, তাদের বিল অনেক বেশি আসে।
মাইক্রোওয়েভ, রাইস কুকার বা ইলেকট্রিক কেটলি – এইসব রান্নার যন্ত্রপাতি সাধারণত কম সময়ে বেশি পাওয়ার খরচ করে। যেমন মাইক্রোওয়েভ ১০০০ ওয়াট বা তার বেশি হতে পারে। দিনে যদি ২০ মিনিট চালানো হয়, তাহলে মাসে প্রায় (১×২০×৩০)/৬০ = ১০ ইউনিট হয়। যদিও মনে হয় অল্প চালালাম, কিন্তু পাওয়ার বেশি বলে দ্রুত ইউনিট জমে।
ওয়াশিং মেশিনও এমন একটা জিনিস, যেটা সময় স্বল্প হলেও বেশি ওয়াট খরচ করে। ধরুন সপ্তাহে ৩ দিন করে এক ঘণ্টা চালান, ৫০০ ওয়াটের মেশিন হলে (০.৫×৩×৪)= ৬ ইউনিট হয়ে যায়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যন্ত্র ছোট না বড়, তা নয়—তা কতক্ষণ চালান এবং তার পাওয়ার রেটিং কত, সেটাই নির্ধারণ করে ইউনিট খরচ। অনেকে ভেবে থাকেন, ছোট ফ্যান বা বাল্বে খরচ কম হবে, ঠিক আছে, কিন্তু যদি ৮টা ফ্যান ২৪ ঘণ্টা চলে, তাহলে সেটা এসির চেয়েও বেশি খরচ করতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, একটু হিসাব করে যন্ত্র চালালে বিল বাঁচানো সম্ভব। যন্ত্রের গায়ে লেখা ওয়াট দেখলেই একটু অংক করলে বুঝে যাবেন কত ইউনিট খরচ হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ বিকাশের পিন পরিবর্তন করার নিয়ম
বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ বিল অনেকের জন্যই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একটু অসচেতন হলেই মাস শেষে মোটা অঙ্কের বিল হাতে চলে আসে। তবে চাইলেই আপনি
আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসে কিছু ছোট পরিবর্তন এনে বিদ্যুৎ খরচ অনেকটা কমিয়ে
ফেলতে পারেন। এখানে আমি এমন কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উপায় তুলে ধরছি,
যেগুলো নিজের বাসায় অনুসরণ করে সত্যিই উপকার পেয়েছি।
প্রথমেই বলা দরকার, দিনের বেলায় যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করা উচিত।
অনেক সময় আমরা দিনের আলো থাকার পরও ঘরে বাতি জ্বালিয়ে রাখি, যা একেবারেই
অপ্রয়োজনীয়। জানালাগুলো খোলা রাখলে শুধু আলো নয়, হাওয়াও আসবে, ফলে
ফ্যানের উপর নির্ভরতা কমবে।
এরপর আসি ফ্যান ও বাতির ব্যবহারে। আপনি যদি এলইডি লাইট ব্যবহার করেন, তাহলে
আগের তুলনায় অনেক কম ইউনিট খরচ হবে। আমি বাসার সব লাইটই এলইডিতে বদলে
ফেলেছি—ফলে বিলের পার্থক্য পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। তেমনি ফ্যান চালিয়ে
বাইরে চলে গেলে বা ঘুমিয়ে পড়লে সেটি বন্ধ করে দেওয়াও খুব দরকার। ছোট এই
অভ্যাসটাও মাস শেষে অনেক ইউনিট বাঁচাতে পারে।
রেফ্রিজারেটরের বিষয়েও সচেতন হওয়া জরুরি। দরজাটা বারবার খোলা-বন্ধ করা বা
অনেকক্ষণ খোলা রাখা বিদ্যুৎ খরচ বাড়িয়ে দেয়। খাবার রাখার সময়ও ঠাণ্ডা
হাওয়ার চলাচল যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাছাড়া, বছরে
এক-দু’বার রেফ্রিজারেটর পরিষ্কার করলে এটি আরও কার্যকরভাবে চলবে এবং কম
বিদ্যুৎ খরচ হবে।
এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে, আমি ব্যক্তিগতভাবে একটা নিয়ম মেনে
চলি—রুম ঠাণ্ডা হলে এসি বন্ধ করে ফ্যান চালাই। এতে ঘর ঠাণ্ডা থাকে আবার
বিদ্যুৎ খরচও হয় না অতিরিক্ত। যারা ইনভার্টার এসি ব্যবহার করেন, তারা আরও
ভালো সাশ্রয় করতে পারেন কারণ এটি স্থির গতিতে চলে এবং কম বিদ্যুৎ খরচ করে।
সবচেয়ে বড় কথা, যেকোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্র চালানোর পর সেটা বন্ধ করা,
চার্জারগুলো প্লাগ থেকে খুলে রাখা, টিভি-কম্পিউটার স্ট্যান্ডবাই না রেখে
পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া—এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো গড়ে তুললে বিদ্যুৎ খরচ
অনেকটাই কমে যাবে।
আমার অভিজ্ঞতা বলছে, এসব নিয়ম মানলে শুধু বিদ্যুৎ বিল কমে না, বরং পরিবেশের
প্রতিও দায়িত্ব পালন করা যায়। কারণ আমরা যত কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করব, তত কম
পরিমাণ জ্বালানি খরচ হবে—যার প্রভাব পড়বে পুরো পৃথিবীর উপর। তাই শুরুটা হোক
নিজের ঘর থেকেই।
বিল চেক ও পরিশোধের ডিজিটাল সুবিধা
আগে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া বলতে বোঝাতো লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ঘন্টার
পর ঘন্টা অপেক্ষা করা, কখন কাউন্টার ফাঁকা হবে আর আপনি টাকা জমা দিতে পারবেন।
কিন্তু এখন সময় অনেক বদলে গেছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে বিদ্যুৎ বিল এখন
ঘরে বসেই পরিশোধ করা যায়, তাও মাত্র কয়েক ক্লিকে। আমি নিজেই গত দুই বছর ধরে
আর কাউন্টার মুখো হই না।
সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি যে কোনো সময় নিজের বিল
চেক করতে পারেন। যেমন ধরুন, আপনি বিকাশ, নগদ বা রকেটের মতো কোনো মোবাইল
ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাপে ঢুকে শুধু কনজিউমার নাম্বার বসালেই জানতে
পারবেন চলতি মাসে আপনার বিল কত এসেছে। বিল আসার আগেই আপনি আগের মাসের ইউনিট
দেখে আন্দাজ করতে পারেন খরচ কত হতে পারে। এতে একধরনের মানসিক প্রস্তুতিও
থাকে।
আর বিল পরিশোধ? সেটা তো আরও সহজ! অ্যাপ থেকেই সরাসরি বিলটা জমা দেওয়া যায়।
পেমেন্ট হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই একটা ডিজিটাল রিসিট চলে আসে, যেটা আপনি চাইলে
সংরক্ষণও করে রাখতে পারেন। অনেকে আবার ব্যাংকের নিজস্ব অ্যাপ বা ওয়েবসাইট
ব্যবহার করেও বিল পরিশোধ করেন, যার সুবিধা হলো নির্ভরযোগ্যতা ও সহজ রেকর্ড
রাখা যায়।
এই সুবিধাগুলো শুধু সময় বাঁচায় না, বরং অনাকাঙ্ক্ষিত বিল মিস হওয়ার
সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়। নিয়মিত অনলাইনে বিল চেক করলে আপনি ভুল বিল বা
অতিরিক্ত চার্জও সহজে ধরতে পারেন। আমার মতে, প্রযুক্তি আমাদের হাতে এমন এক
নিয়ন্ত্রণ দিয়েছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না।
বিল সংক্রান্ত ভুল-ত্রুটি ও তার সমাধান
প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল হাতে পাওয়ার পর অনেকেই এমন অবস্থার মুখোমুখি হন,
যেখানে বিলের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি দেখায় বা খরচের সাথে মিল
পায় না। এটি কোনো বিরল ঘটনা নয়—বরং বাস্তব জীবনে বেশ পরিচিত সমস্যা। আমার
নিজেরও এরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে, আর সেখান থেকেই কিছু বাস্তব সমাধানও শিখেছি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুলটা হয় মিটার রিডিং নেওয়ায়। অনেক সময় মিটার রিডার
ঠিকমতো সংখ্যা না দেখে অনুমান করে রিডিং লিখে নিয়ে যান। কেউ কেউ গত মাসের
সাথে মিলিয়ে অনুমান করে ইউনিট বসিয়ে দেন, যা পুরোপুরি অযৌক্তিক। ধরুন, গত
মাসে আপনার ইউনিট ছিল ২০০, কিন্তু এ মাসে বাস্তবে খরচ হয়েছে ১৮০। অথচ বিল
এসেছে ২২০ ইউনিটের, তখনই বুঝতে হবে কোনো একটা ভুল হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রথমে নিজেই মিটার দেখে বর্তমান রিডিংটি লিখে রাখা দরকার।
তারপরে বিলের ইউনিটের সাথে তুলনা করুন। যদি দুইটি সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য
থাকে, তাহলে নিকটস্থ বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো উচিত।
অনেক সময় অফিসে গেলে একরকম মনোযোগ না পেলে লিখিত অভিযোগ পত্র জমা দিলে
কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
কখনো কখনো সংযোগ পরিবর্তন, তার ঢিলা হয়ে যাওয়া বা মিটার ত্রুটির কারণেও
অতিরিক্ত ইউনিট রেকর্ড হতে পারে। এই ক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের সহায়তা নিয়ে
মিটার পরীক্ষা করে নিতে হয়। তারা প্রয়োজনে নতুন মিটার বসিয়ে দেন এবং আগের
বিল পুনর্মূল্যায়ন করে দেন।
এছাড়া অনলাইনে বিল চেক করার সময়েও কিছু সময় তথ্য হালনাগাদ না থাকলে
বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। আমি একবার দেখেছি, বিকাশ অ্যাপে বিল আসছে ৯০০
টাকা, অথচ প্রকৃত বিল ছিল ৭২০ টাকা। পরে দেখি, পুরনো একটি বকেয়া দেখানো
হচ্ছে যেটা আসলে আগেই পরিশোধ করা হয়েছে। পরে অফিসে গিয়ে রিসিট দেখানোর পর
ভুলটা সংশোধন করা হয়।
তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি মাসের নির্দিষ্ট দিনে নিজের রিডিংটা দেখে রাখেন এবং
সেটা লিখে রাখেন। অনেকেই এখন মাসে একবার মিটার ছবি তুলে রাখেন ফোনে, যাতে
প্রমাণ হিসেবে দেখাতে পারেন। এতে যেমন নিজের খরচের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়,
তেমনি ভুল হলে সহজে ধরা যায়।
সবশেষে বলি, বিদ্যুৎ বিল নিয়ে যদি কখনো সন্দেহ হয়, সেটিকে ছোট করে দেখার
কিছু নেই। কারণ এই ছোট ছোট ভুল থেকেই বছরের শেষে অনেক বড় অঙ্ক জমে যেতে
পারে। তাই সচেতন থাকা, সময়মতো প্রতিবাদ করা এবং নিজের পক্ষের তথ্য সংরক্ষণ
করে রাখা, এই কয়েকটি অভ্যাসই পারে আপনাকে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা
করতে।
প্রিপেইড মিটার বনাম পোস্টপেইড মিটার
বছর দশেক আগেও আমরা শুধু পোস্টপেইড মিটারের কথাই জানতাম। মানে, মাস শেষে
বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তারপর বিল দেওয়া। কিন্তু এখন আর সময়টা এক রকম নেই।
ধীরে ধীরে প্রিপেইড মিটার নামক একটি নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে, যা অনেকেই এখন
ব্যবহার করছেন। আমি নিজেও কয়েক বছর আগে পোস্টপেইড ছেড়ে প্রিপেইডে চলে
এসেছি, আর অভিজ্ঞতা থেকে বলছি—দুইটার পার্থক্যটা বেশ ভালো করেই বোঝা যায়।
পোস্টপেইডে আপনি পুরো মাস বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তারপর বিল আসে। সেটা হাতে
নিয়ে হয়তো একটু চমকও খেতে হয়, যদি খরচ বেশি হয়ে যায়। অনেক সময় অতিরিক্ত
বিল এলে তখন অফিসে দৌড়াতে হয়। আবার বিল মিস করলে জরিমানা, সংযোগ বিচ্ছিন্ন
হওয়া—এইসব ঝামেলা থাকে। তাছাড়া বিলের অংকটা আগেভাগে আন্দাজ করা কঠিন।
অন্যদিকে প্রিপেইড মিটারে আপনি মোবাইলের রিচার্জের মতো ইউনিট কিনে ব্যবহার
করেন। অর্থাৎ, আগে টাকা, পরে ব্যবহার। এতে আপনি প্রতিদিনই দেখতে পারেন কত
ইউনিট খরচ হলো, কত বাকি আছে। ফলে খরচের উপরে একটা নিয়ন্ত্রণ থাকে। ধরুন,
প্রতিদিন গড়ে ৮ ইউনিট খরচ হচ্ছে, আপনি চাইলে কিছু যন্ত্র কম চালিয়ে সেটা ৬
ইউনিটে নামিয়ে আনতে পারেন। এতে মাস শেষে খরচ কমে।
তবে কিছু অসুবিধাও আছে। যেমন, রিচার্জ না থাকলে হঠাৎ বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যেতে
পারে, সেটা রাতে হলে আরও ভোগান্তি। আবার কিছু প্রিপেইড মিটারে সার্ভিস চার্জ,
ভ্যাট এসব আলাদাভাবে কেটে নেওয়া হয়, যেটা পোস্টপেইডে মাস শেষে যোগ হয়।
তবু বলব, যাদের বাজেটের হিসাব করা, তারা প্রিপেইডেই স্বস্তি পাবেন। আর যারা
নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে পারেন, তাদের জন্য পোস্টপেইডও ঝামেলাহীন।
আরও পড়ুনঃ প্রিপেইড মিটারের রিচার্জ এর পদ্ধতি
সচেতনতা ও নিয়মিত যাচাই কেন জরুরি
আমরা প্রতিদিন নানা ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি—ফ্যান, লাইট, ফ্রিজ, টিভি,
ওয়াশিং মেশিন থেকে শুরু করে এয়ার কন্ডিশনার পর্যন্ত। এসব যন্ত্র প্রতিদিন
আমাদের বিদ্যুৎ খরচে অংশ নিচ্ছে, কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝি না কোনটা কত খরচ
করছে বা কোথায় অযথা অপচয় হচ্ছে। আর এখানেই সচেতনতার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি—একবার হঠাৎ করে দেখি বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি
এসেছে। প্রথমে মনে হলো মিটারই বোধহয় খারাপ! পরে দেখি, ফ্রিজের দরজাটা ঠিকমতো
লাগছিল না, ফলে সেটি সারাক্ষণ চালু অবস্থায় ছিল। এই ছোট্ট অসচেতনতা থেকে
পুরো মাসে বিল অনেক বেড়ে যায়। যদি আগে খেয়াল করতাম, তাহলে হয়তো এমনটা হতো না।
নিয়মিত যাচাই বলতে শুধু মিটারে গিয়ে রিডিং দেখা নয়, বরং প্রতিদিনের ব্যবহার
বুঝে নেয়াও জরুরি। আপনি যদি সপ্তাহে একবারও নিজে গিয়ে মিটারে চোখ বুলিয়ে নেন,
তাহলে মাস শেষে বিল নিয়ে চমক খেতে হবে না। বরং আগেভাগেই খরচ সামলে নেওয়া
যাবে।
আর সচেতনতা শুধু নিজের লাভের জন্য নয়, দেশের সম্পদেরও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত
করে। বিদ্যুৎ একটি মূল্যবান সম্পদ, এর অপচয় মানে শুধু বেশি টাকা খরচ নয়,
বরং অন্য কেউ এই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। তাই ব্যক্তিগতভাবে সচেতন
হওয়া, নিয়মিত যাচাই করা এবং অপচয় ঠেকানো—এই কয়েকটি অভ্যাস গড়ে তুললে
আপনি নিজেরই উপকার করবেন।
পরিশেষে
কারেন্ট বিল বের করার বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ কারেন্ট বিল নিয়ে অনেকেই
অভিযোগ করেন—‘খরচ তেমন হয়নি, অথচ বিল কেন এত বেশি?’ আমিও একসময় এই প্রশ্নই
করতাম। কিন্তু পরে বুঝলাম, আমরা যদি নিজেরা বিল হিসাব করার নিয়মটা একটু
জানতাম, তাহলে অনেক ঝামেলা এড়ানো যেত।
মিটার রিডিং থেকে শুরু করে প্রতি ইউনিটের চার্জ, অতিরিক্ত ফি, ভ্যাট—সব কিছু
মিলিয়ে বিল তৈরি হয়। আগে আমি এসব বুঝতাম না, বিদ্যুৎ অফিস যা দিত তাই মেনে
নিতাম। কিন্তু একবার ভুল বিল আসার পর বিষয়টি নিয়ে খুঁটিয়ে জানতে শুরু করি।
তখন বুঝলাম, প্রতি মাসের ইউনিট ব্যবহারের হিসাব নিজে রাখলে অনেক সমস্যা এড়ানো
যায়।
আমার মতে, এটা শুধু হিসাব নয়, বরং সচেতন হওয়ার একটা চর্চা। এখন আমি মাসের
শুরুতে ও শেষে মিটারের ছবি তুলে রাখি। এতে নিজের খরচের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে,
আর কেউ ভুল করলে সেটাও ধরতে পারি। বিদ্যুৎ আমাদের প্রয়োজনীয় সম্পদ—এর সঠিক
ব্যবহার ও হিসাব জানা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url